কে. এম. রুহুল আমীন, মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি, ২৪ এপ্রিল (প্রাইম নিউজ বিডি ডটকম) – আইলা ও সিডর দুর্গত বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার মধ্যদিয়ে প্রবাহিত পানগুছি নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদী তীরবর্তী দু’পাড়ের ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ২৫ গ্রামের মানুষ এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
প্রায় ৪ দশক ধরে পানগুছি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বাগেরহাট জেলার প্রধান ব্যবসা কেন্দ্র এক সময়ের ছোট কলকাতা মোরেলগঞ্জ বন্দরসহ নদী তীরবর্তী হাজার হাজার বাড়ি-ঘর, স্কুল-মাদ্রাসা, হাট-বাজার, দোকানপাটসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি। সর্বস্ব হারিয়ে এসব এলাকার মানুষ এখন সর্বশান্ত।
পানগুছির অব্যাহত ভাঙন কেড়ে নিয়েছে উপজেলার বহু ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত নিদর্শন। কেড়ে নিয়েছে ইংরেজ বিরোধী লড়াকু সৈনিক বীর যোদ্ধা শহীদ রহিমউল্লাহর মাটির কেল্লা (বসত ভিটা), কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, প্রধান শেডঘর, দুটি সরকারি খাদ্য গুদাম, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, হরিসভা মন্দির, উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রী অফিস ভবন, স্যানিটারি ইন্সপেক্টরের অফিস ভবন, উপজেলা ডাকঘর, থানা ষ্টাফ কোয়ার্টার, ঐতিহাসিক আনসার ময়দান, ডাক বাংলো, বাইরখালী ইউ পি ভবন, থানা জামে মসজিদ, ছোলমবাড়িয়া বাসষ্ট্যান্ড, ষ্টীমার ঘাটসহ কয়েকটি লঞ্চঘাট।
এ,সি,লাহা হাই স্কুলের মূলভবন, বারইখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আব্দুল আজিজ মেমোরিয়াল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাখালী মহব্বত আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সোনাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বহরবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যলয়, বহরবুনিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফুলহাতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পঞ্চকরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
এছাড়াও সোনাখালী, ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী, বহরবুনিয়া, পঞ্চকরণ বাজারসহ মোরেলগঞ্জ বাজারের তিন-চতুর্থাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
নিশ্চিহ্ন হবার পথে লতিফিয়া ফাযিল মাদ্রাসা, এ,সি,লাহা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, থানা ভবন, পুলিশ কোয়ার্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ব্রিটিশ শাসক রবার্ট মোরেলের বসতবাড়ি “ঐতিহাসিক কুঠিবাড়ী”, রবার্ট মোরেলের স্মৃতিস্তম্ভসহ বহু সরকারি বেসরকারি ভবন ও নদী তীরবর্তী বিভিন্ন হাট-বাজার, দোকানপাট হাজার হাজার একর ফসলিজমি ও বসতভিটা। বাড়িঘর, দোকানপাট, বাগানবাড়ি, ফসলিজমি সর্বস্ব হারিয়ে হাজার হাজার মানুষ এখন ভূমিহীন হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবার বারবার বসত ভিটা পরিবর্তন আর ভাঙনের স্বীকার হতে হতে সব হারিয়ে পরিবার পরিজন দেশের বিভিন্ন স্থানে ছিন্নমূল অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আবার কেউ কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে কাজের সন্ধ্যানে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে চলে গেছে। নদীর তীরবর্তী ভাঙনের তীব্রতা একটু কাটলেও আমতলী, কুমারখালী, সন্ন্যাসী, খাউলিয়া, গাবতলা, কাঠালতলা, বারইখালী, কাশ্মীর, সুতালড়ী, বহরবুনিয়া, ফুলহাতা, ঘষিয়াখালী গ্রাম ও পূর্বতীরের হোগলাবুনিয়া, বদনিভাঙা, সানকিভাঙা, ছোলমবাড়িয়া, দোনা, শ্রেনীখালী, পুটিখালী, সোনাখালী, পঞ্চকরণ, হেড়মাসহ বিভিন্ন গ্রামের নদী তীরবর্তী মানুষ এখনও ভাঙগন আতঙ্ক পুরোপুরি কাটেনি।
ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের চোখেমুখে দেখা গেছে শুধু হতাশা আর আতঙ্কের ছাপ। ইতিমধ্যে বহু মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে সরকারি রাস্তা, ওয়াপদা বাঁধের পার্শ্বে খুপড়ি বেধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
শহর রক্ষা বাধ নাথাকায় ঝড়, জলোচ্ছাসে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলো প্লাবিত হয়ে বাড়িঘরের ক্ষতির সাথে সাথে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে মাছের ঘের ও মৌসুমি ফসলের। লবন পানি ঢুকে ফসলি জমির উর্বরতা হ্রাস পেয়ে ঘটছে ফসল হানি, সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার। এ অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন নদীর দুই পাড়ে বেরিবাঁধ দেয়া।